ঢাকা ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে ৩১ দুর্ঘটনা

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে হওয়া দুর্ঘটনা ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে মোট ৩১ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৬টির তদন্ত শেষে হয়েছে। ১৫টির তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকে এতথ্য জানায় মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে হওয়া দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তদন্ত অনুযায়ী দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণসহ সব বিভাগের কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ৩ আগস্ট দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে রেলওয়ে কর্মচারীদের একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাত ৮টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর উপ-পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ প্লাটফর্ম গেইট দিয়ে স্টেশনে প্রবেশের চেষ্টা করলে টিকেট কালেক্টর (টিসি) মো. রিপন মিয়া তার কাছে প্লাটফর্ম টিকেট চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে মো. শাহনেওয়াজ নিজেকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে কয়েকজন রেলওয়ে কর্মচারী জোর করে টিসি রুমে নিয়ে আটকে রাখে। আনুমানিক রাত ৮টা ৬ মিনিটের দিকে ইন্সপেক্টর রায়হান আহমেদ খানের নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্লাটফর্মে প্রবেশ করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসএই গোলাম রাব্বানি তার হাতে থাকা এক্সপান্ডবল বাটন দিয়ে আরএনবি নিপাহী মাসুদ পারভেজকে মারধর করেন। এতে তিনি আহত হলে তাকে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময়ে দিনাজপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

পরের দিন সকাল থেকে রেলওয়ে কর্মচারীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একই সঙ্গে রেল চলাচল অবরোধ করেন। পড়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রেলওয়ে পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্টেশনে অবস্থান করেন।

একই দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসাইন দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। তখন রেলওয়ে কর্মচারীরা তার কাছে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে প্লাটফর্মের বাইরে গেলে তাদের মাদক মামলায় ফাঁসানো হবে বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ সময় অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসাইন এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে তাদের নিশ্চয়তা দেন ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

জানা যায়, কমিটি বেসরকারি খাতের ৪০টি ট্রেনের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর নতুন করে লিজ দেওয়া বন্ধ করা ও পরবর্তী বৈঠকে ট্রেন লিজের কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে রেল মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত ৪টি ট্রেনকে নমুনা ধরে মাসিক আয় ও পরিচালনা ব্যয়ের তুলনামূলক হিসাব আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধ দখলকৃত ভূমি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কমিটি বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ কে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করে।

সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, আসাদুজ্জামান নূর, শফিকুল ইসলাম শিমুল, শফিকুল আজম খান, সাইফুজ্জামান, এইচ এম ইব্রাহিম, গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি অংশ নেন।

বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে ৩১ দুর্ঘটনা

প্রকাশিত : ০৫:২৪:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে মোট ৩১ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৬টির তদন্ত শেষে হয়েছে। ১৫টির তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২২তম বৈঠকে এতথ্য জানায় মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত তিন মাসে হওয়া দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তদন্ত অনুযায়ী দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণসহ সব বিভাগের কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ৩ আগস্ট দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে রেলওয়ে কর্মচারীদের একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাত ৮টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর উপ-পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ প্লাটফর্ম গেইট দিয়ে স্টেশনে প্রবেশের চেষ্টা করলে টিকেট কালেক্টর (টিসি) মো. রিপন মিয়া তার কাছে প্লাটফর্ম টিকেট চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে মো. শাহনেওয়াজ নিজেকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে কয়েকজন রেলওয়ে কর্মচারী জোর করে টিসি রুমে নিয়ে আটকে রাখে। আনুমানিক রাত ৮টা ৬ মিনিটের দিকে ইন্সপেক্টর রায়হান আহমেদ খানের নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্লাটফর্মে প্রবেশ করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসএই গোলাম রাব্বানি তার হাতে থাকা এক্সপান্ডবল বাটন দিয়ে আরএনবি নিপাহী মাসুদ পারভেজকে মারধর করেন। এতে তিনি আহত হলে তাকে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময়ে দিনাজপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

পরের দিন সকাল থেকে রেলওয়ে কর্মচারীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একই সঙ্গে রেল চলাচল অবরোধ করেন। পড়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রেলওয়ে পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্টেশনে অবস্থান করেন।

একই দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসাইন দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। তখন রেলওয়ে কর্মচারীরা তার কাছে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে প্লাটফর্মের বাইরে গেলে তাদের মাদক মামলায় ফাঁসানো হবে বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ সময় অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসাইন এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে তাদের নিশ্চয়তা দেন ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

জানা যায়, কমিটি বেসরকারি খাতের ৪০টি ট্রেনের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর নতুন করে লিজ দেওয়া বন্ধ করা ও পরবর্তী বৈঠকে ট্রেন লিজের কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে রেল মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত ৪টি ট্রেনকে নমুনা ধরে মাসিক আয় ও পরিচালনা ব্যয়ের তুলনামূলক হিসাব আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধ দখলকৃত ভূমি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কমিটি বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ কে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করে।

সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, আসাদুজ্জামান নূর, শফিকুল ইসলাম শিমুল, শফিকুল আজম খান, সাইফুজ্জামান, এইচ এম ইব্রাহিম, গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি অংশ নেন।

বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।