অনলাইন ডেস্ক ॥ ১৯ তারিখটা স্বর্ণাক্ষরে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে। যুগ যুগ এ দেশের ক্রীড়ামোদি মানুষ এই দিনটিকে মনে রাখবে। মনে রাখার উপলক্ষ্যটা তৈরি করে দিলেন দেশের এক ঝাঁক নারী ফুটবলার। এই দিন বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো জয় করলেন দক্ষিণ এশিয়া। এই অঞ্চলের মেয়েদের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতলেন সাবিনা-কৃষ্ণারা।
ভুটানকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখানোর পর থেকেই শুরু হয় এই ম্যাচ নিয়ে আলোচনা। দেশের প্রতিটি সেক্টরের মানুষের দৃষ্টি চলে যায় কাঠমান্ডুতে। একজন সাধারণ ফুটবল দর্শক থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত, এই ম্যাচ নিয়ে শুভকামনার পর শুভকামনা দিতে থাকেন সামাজিক যোগাযো মাধ্যমে। নারী ফুটবলারদের ছবিতে সয়লাব হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া।
কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল এক দল প্রবাসী বাংলাদেশি। যদিও তাদের সংখ্যা ছিল স্বাগতিক নেপালের সমর্থকদের তুলনায় অনেক কম। তবু মাঠ জুড়ে যেন কেবল বাংলাদেশের চিৎকারই শোনা গেলো ১৪ মিনিটের পর থেকে। মেয়েরা গোল দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর চওড়া চয়ে যায় বাংলাদেশিদের কণ্ঠ।
‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠে স্টেডিয়াম। শুধু কী তাই? বেসরকারি টেলিভিশন টি-স্পোর্টস এর কল্যাণে এই ম্যাচটি সরাসরি দেখতে পেরেছে ক্রীড়াপাগল মানুষরা। যদিও কারিগরি ত্রুটির কারণে ঠিক মতো খেলা দেখা যায়নি। তারপরও রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশে লাখ লাখ মানুষ এই ম্যাচের প্রতিটি মূহুর্ত দেখতে হাঁসফাঁস করেছেন।
ফাইনালের আগে সব হিসেবেই ছিল বাংলাদেশ ভেভারিট। নেপাল এগিয়ে ছিল কেবল স্বাগতিক হওয়ার কারণে। তাতে কী? খেলা কোন মাঠে হয়েছে তা থোড়াই কেয়ার করেছেন সাবিনারা।
প্রথম মিনিট থেকে নেপালের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন সাবিনা, স্বপ্না, সানজিদা ও কৃষ্ণারা। প্রথম মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। ১০ মিনিটে দুঃসংবাদের ইঙ্গিত এসেছিল স্বপ্না মাঠের বা্ইরে চলে গেলে। কিন্তু সেই দুঃসংবাদকে পাশ কাটান স্বপ্নার বদলি নামা শামসুন্নাহার জুনিয়রই। বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন ১৪ মিনিটের মাথায়।
৪১ মিনিটে কৃষ্ণা রানী সরকার দ্বিতীয় গোল করার পর ম্যাচটি ঝুলে যায় বাংলাদেশের দিকে। তবে নেপাল সহজে দমে যাওয়ার দল না। ঘরের মাঠে খেলা। মরণ কামড় দিয়ে তারা ব্যবধান কমিয়েছিল ৭০ মিনিটে। যদিও ম্যাচে তারা আর ফিরতে পারেনি। ৭৭ মিনিটে বাংলাদেশের কৃষ্ণা যখন নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন, তখন চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল শুধু সময়ের ব্যপার।
টিভির সামনে লাখো মানুষের দাপাদাপি ছিল যখন, শেষ দিকে কারিগরি ত্রুটিতে খেলা দেখা যাচ্ছিল না। নেপালে থাকা সাংবাদিকদের ফোন করে ম্যাচের আপডেট জানা ছাড়া আর উপায় ছিল না। এভাবেই কেটে গেলো বাড়িয়ে দেওয়া চার মিনিট সময়। শেষ বাঁশি বাজার পর কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ বলে যে স্লোগান শুরু হলো, তা আছড়ে পড়লো বাংলাদেশের আনাচে কানাচেও।
নেপালকে হারানো সহজ হবে না, সেটা আগে বোঝা গিয়েছিল। কারণ তারা এই নিয়ে পঞ্চমবার খেললো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে। পাঁচবারে তারা শিরোপা জয়ের স্বাদ না পেলেও বাংলাদেশ পেলো দ্বিতীয় চেষ্টাতেই।
২০০৩ সালে বাংলাদেশের ছেলেরা প্রথম জিতেছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্ট। তারপর বাংলাদেশ আর একবার ফাইনাল খেলতে পেরেছিল মাত্র। সর্বশেষ আসরগুলোতে পারেনি না গ্রুপপর্ব টপকাতেই। ছেলেদের ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকার মধ্যেই মেয়েরা আনলো ঐতিহাসিক সাফল্য। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
নেপালের এই স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত হয়েই থাকলো। ১৯৯৯ সালে এই মাঠেই বাংলাদেশ প্রথম ধরেছিল সোনার হরিণ। জুয়েল রানার নেতৃত্বে সেবার বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতেছিল সাফ গেমসে (বর্তমানে এসএ গেমস)। সেবারও ফাইনালে বাংলাদেশ হারিয়েছিল নেপালকে।