বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারঃ দীর্ঘ এক যুগেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। সর্বশেষ শরিফ সিরাজ কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছিলো। এরপর থেকে কমিটি স্থগিত, বিলুপ্ত আর বিদ্রোহীদের আগুনেই পুড়ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীদের ভাগ্য। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে পরিচয় না পাওয়ায় হতাশ কর্মীরা। বয়সসীমা পার হওয়া আর তীব্র হতাশায় কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ইতি টানছেন। চাপা অভিমানে কেউ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, কেউ করেছেন বিয়ে। গত ১২ বছরে তিনবার কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ-সিরাজের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পর আর এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ শরীফ-সিরাজ কমিটির বিলুপ্তির ছয় মাস পর ১৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হলে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে শোভন-রাব্বানীর কমিটি। এরপরই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিদ্রোহীরা অবস্থান নেন। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের বিদ্রোহীদের সাথে তরিকুল-রাসেলের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি উক্ত কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই কমিটি দুই বছর অতিক্রম করলেও পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় কোন আলোর মুখ দেখেনি শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা।
সূত্রে জানা যায়, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২০ জুলাই ছাত্রলীগের এই সুপার ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নতুন কমিটি দেয়ার আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিদায় ঘটে। শীর্ষ দুই নেতার বিদায়ের পর শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দীর্ঘতর হতে থাকে। এরপর করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধের অজুহাতে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় দীর্ঘ আড়াই বছর নেতৃত্বহীন ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ফলে কর্মীদের নিজের নামের পাশে পদবী লাগানোর ভাগ্য হয়ে উঠেনি।
এরপর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এস এম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। কমিটি হওয়ার ছয় মাসের মাথায় কোন কারণ উল্লেখ না করেই গত ১ জুলাই সেই কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বারবার কমিটি ভাঙ্গনে আলোর মুখ দেখেনি শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী কর্মীরা। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এফ এম শরীফুল ইসলাম বলেন, আমাদের আগে এবং পরে কোনটাই পূর্ণাঙ্গ হয় নাই আমরাই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছি। আমাদের সময় ফ্যাকাল্টি কমিটি দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করেছিলাম এক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি ডিপার্টমেন্টে যখন কমিটি গঠন করেছি। নেতৃত্ব তৈরীর যে পথ তৈরি করলাম সে পথ বন্ধ করার জন্য সেই সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ এবং জাকির হোসেন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কোন কমিটি গঠন করা যাবে না যেটা গঠন করা হয়েছে সেটা অবৈধ। হিংসার বসতিতে তারা এটা আমাদের করেছিল। একটা বিশ্ববিদ্যালয় হল একটা জাতির বিবেক। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের এখানে যেহেতু হল নাই সে ক্ষেত্রে যদি কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ না হয় তাহলে অবশ্যই নেতৃত্বের যে বিকাশটা আমরা পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতি নেতা তৈরি আমাদের কমে যাবে। অবশ্যই আমাদের সকলের সম্মিলিতভাবে বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সেই রকম একটা পরিবেশ তৈরি করে কমিটি দিলে সেটা হবে মেধাবী কর্মী তৈরির উত্তম পথ।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়াটা কি? তারা হুট করে জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি বানায় দিল আর সে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা মেনে নিল না। সে ক্ষেত্রে সাবেক নেতৃবৃন্দ বর্তমান নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে কমিটি দিলে সেই কমিটিটা রান করার সম্ভাবনা বেশি থাকে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটি দিলে সেটা বাস্তবায়ন হয় না। আর অযোগ্য নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দিতে পারে না এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও পালন করতে পারে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। পূর্ণাঙ্গ কমিটির মাধ্যমে কর্মীদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটকে শক্তিশালী করতে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দরকার।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা বলেন, র্দীঘ কয়েক বছর থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় আমরা হতাশায় রয়েছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে, কর্মীরা সারা জীবন কর্মী থাকবে কোনো দিন নেতা হতে পারবেনা।