উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ফলাফল গতবারের দুর্গাপূজায় ভোগ করেছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
গতবছর পুজোয় কুমিল্লায় পুজোমণ্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনাকে ঘিরে গোটা বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। পূজা মন্ডপের পাশাপাশি লুটপাট হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়েছে তাদের বাড়িঘর। রোজার সময় থেকে শুরু করে প্রায় মাসব্যাপী চলছিল এরকম হিংসাত্মক সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড পরিস্থিতি সামলাতে শেষপর্যন্ত সরকারকে বিজিবি মোতায়েন করতে হয়েছে।
সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর মতই দেশে সমান অধিকার আছে হিন্দুদেরও। জন্মাষ্টমীর দিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে এই বার্তা দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতে, পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি দুর্গাপুজার মণ্ডপ হয় ঢাকা শহরে। এবার যাতে পুজোকে ঘিরে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আগে থেকেই তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, এই বছর প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখা বাধ্যতামূলক। সঙ্গে মণ্ডপেই পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক এবং ভ্রাম্যমাণ আলাদত থাকবে।
ঢাকায় সচিবালয়ে দুর্গাপুজো উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি জানান, ১ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপুজো উদ্যাপিত হবে বাংলাদেশে। এবছর বাংলাদেশ ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গা পুজো হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার এক হাজারের বেশি মণ্ডপে পুজো উদযাপিত হচ্ছে। পুজো ঘিরে গুজব ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতেও তৎপর প্রশাসন। গুজবের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো সমস্যা হলে ৯৯৯–এ কল করা যাবে। পাশাপাশি আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজান ও নামাজের সময় শব্দের ব্যবহার সহনীয় থাকবে।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গাপুজোর শুরু থেকে বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত সারাদেশের মণ্ডপগুলোতে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার চাঁদরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত বছরের সন্ত্রাসের কথা মাথায় রেখেই এবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন বাংলাদেশের পুজোর আয়োজকরাও ৷ গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ১০টায় ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই বৈঠকে বাংলাদেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬২টি জেলা থেকেই প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ৷ সেই বৈঠকে মোট ২১ দফার একটি নির্দেশিকা প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয় এবং গৃহীত হয় ৷ যার মোদ্দা কথা হল, পুজোর সময় সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে ৷ যাতে গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে ৷ বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল চারটি মূল স্তম্ভের উপর জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা।ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক হামলায় বারবার নিষ্পেষিত হয়েছে বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অতীতের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
Attachments area
ReplyForward
|