ঢাকা ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কতটুকু ভালো আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার গুলো

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ডলারের চরম সংকট বিশ্বজুড়ে চলা অস্থিতিশীল রাজনৈতিক  সংকট নানাবিদ কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের মূল্য
‘আমি কী রকম বেঁচে আছি/তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/এই কি মানুষ জন্ম?/নাকি শেষ পুরোহিত- জঙ্গলের পাশা খেলা’। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি কী রকম করে বেঁচে আছি’ কবিতায় বেঁচে থাকার যে যন্ত্রণাকাতরতা একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এ যন্ত্রণাদায়ক বেঁচে থাকার কথা শুধু তাঁর কবিতার মাঝেই থমকে আছে তা নয়- বাস্তবেও মানুষ এখন নিজেকে প্রশ্ন করছে, অন্যকে প্রশ্ন ছুঁড়ছে, ‘আমি কী রকম করে বেঁচে আছি, তা কাছ থেকে না দেখলে বোঝাতে পারবো না’।
 প্রাণ কুমার সবুজ সবুজবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ১৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। বেতনের পর সব হিসেব নিকেশ মিলিয়ে মাস শেষের আগেই দেখা যায় পকেট শূন্য। ফলে ধার করতে হয় পরিচিত বা সহকর্মীর কাছে।
তিনি বলেন, ১৮ হাজার টাকা বেতনে হয়তো তিন চার বছর আগে চলতো।  এখন কষ্ট করে ২০-২৫ দিন চলে, কিন্তু তারপর কাছের মানুষদের থেকে ধার নিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো শহরে আর থাকা যাবে না, গ্রামে চলে যেতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচসহ সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের  এমন লাখো মানুষ রয়েছেন আর্থিক চাপে।
সৌরভ দেবনাথ পড়াশোনা করছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুরে ক্লাস শেষে তিনটি টিউশনি পড়াতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। বাকিটা সময়ে প্রস্তুতি নেন সরকারি চাকরির।
ফার্মগেটের একটি মেসে থাকেন ব্যাচেলর সৌরভ সাথে থাকেন আরো দুজন। কিন্তু হঠাৎ করে গত মাসে মেসের ভাড়া আর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে একজন মেস ছেড়ে দিয়েছেন। চাপ বেড়ে গেছে সৌরভের ও। আগে যে টাকায় চলতে পারতেন, এখন আর তাতে খরচ সংকুলান হচ্ছে না। ফলে কাটছাঁট করতে হয়েছে অনেক খরচ। বন্ধ হয়েছে শখের কেনাকাটা, মাঝেমধ্যে ভালো কিছু খাওয়া বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা।
সৌরভ বলেন, যে মেসভাড়া (খাবারসহ) ৪ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, তো হয়ে গেছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাচলরদের খাবার ডিমের দামও এখন দ্বিগুণ। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। আমরা যারা ব্যাচেলর আছি, তারা টিউশনি বা ছোটখাটো চাকরি করে খরচ যোগাই। কিন্তু এভাবে খরচের মাত্রা বাড়তে থাকলে তো বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।
মেস ম্যানেজারদের ভাষ্য, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে খরচ বাড়াতে হয়েছে। যদিও খরচ বাড়ানোর ফলে অনেকের মেসই খালি হয়ে গেছে।
ছোট মুদি দোকান চালান ব্যবসায়ী সাইফুল হক। বাসা নাখালপাড়া। মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার বসবাস। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। এতদিন ব্যবসা দিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল সংসার জীবন। তবে ইদানীং মেলাতে পারছেন না আয়-ব্যয়ের হিসাব। মাস শেষে থেকে যাচ্ছে ঘাটতি।
সাইফুল হক বলেন, বেচাকেনা আগের চাইতে কমে গেছে। মানুষ প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত কেনে না। অনেকে বাকিতেও সওদা কেনে। মালপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে কিনতে পারি না। এছাড়া নিজের খরচ তো আছেই। যে জিনিস কিনতাম ১০ টাকায়, তা কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। মায়ের ওষুধ, বাচ্চাদের পড়াশোনা, বাসাভাড়া সবমিলিয়ে একটা মন্দা সময় পার করছি।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় রিকশা চালান দেলোয়ার হোসেন। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন জমা খরচ বাবদ হাতে থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে এক রুমের ছোট এক বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। মাসে ভাড়া আসে ৩৫০০ টাকা।
ইদানীং বুকে ব্যথা অনুভব করেন আসাদ উল্লাহ। শরীরের শক্তিও আগের মতো নেই। চিকিৎসকও দেখিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন রেস্টে থাকতে। তবে খরচের কথা ভেবে ওষুধও কিনেননি, সংসারের কথা ভেবে রিকশা চালানোও বন্ধ করেননি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রিকশা চালানো কমায়া দিলে চলুম কিভাবে। ঘরে মানুষ আছে, তাদের কথা ভাবতে হয়। তার ওপর আনাজপাতির দাম বাইড়া গেছে। আগে একটু ভালোমন্দ কিন্না খাইতে পারলেও এখন তাও হয় না। এখন মোটা চালের দামই ৫০-৬০ টাকা। আর অন্যান্য কিছুর দাম তো বাদই দিলাম। এভাবে চলতে থাকলে আমরা রিকশাওয়ালারা আর ঢাকায় থাকতে পারুম না।’
মূল্যস্ফীতির হার
সরকারি হিসাবে গত অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত বছরের জুনে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে এখন ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। আর যে দিনমজুর-শ্রমিক বা অন্য পেশার মানুষ গত বছরের জুনে তার শ্রমের বিনিময়ে ১০০ টাকা পেয়েছেন, চলতি বছরের জুনে তারা পেয়েছেন ১০৬ টাকা ৪৭ পয়সা।
এ হিসাবে, দেশের দিনমজুর-শ্রমিকসহ বেসরকারি পেশাজীবীরা যে বাড়তি আয় করছেন, তা দিয়ে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। উল্টো আরও বেশি খরচের বোঝা চাপছে মাথায়। সব মিলিয়ে মানুষের সঞ্চয় বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাসে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম ছিল। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯০। গত এক দশকের মধ্যে সেটাই ছিল ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছরের প্রায় গোড়া থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাবে চলছে গণ্ডগোল।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫।
পরের মাস এপ্রিলে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
জুন মাসে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে, যা ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিপরীতে এই মাসে মজুরি সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী থাকা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবনযাত্রার খরচ। সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতি বোঝে না। তারা জানে এখন আর কোনো কিছু তাদের হাতের নাগালে নেই। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, সরকারি তথ্যই বলছে দেশের মানুষের কষ্টের কথা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সব কিছুর দাম যেভাবে বাড়ানো হলো, তার কোনো অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই। সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আজ এ অবস্থায়। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি আর্থিক চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের ওপরে থাকা চাপ কমে আসবে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে। তেলের দাম কমানো বা সমন্বয় করা হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে সমন্বয় আনার জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। নির্দিষ্টভাবে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে পারে। ফলে স্বল্পবিত্ত মানুষের বোঝার চাপ কিছুটা কমতে পারে। এন আই আহমেদ সৈকত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ সম্পাদক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তিনি মতামত ব্যক্ত করেন বর্তমান সময়ে বহির্বিশ্বের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর বাহিরে নয়। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিত্যদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী মহলের কূট চাল দেশের উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন এবং বহির্বিশ্বের অস্থিতিশীল অবস্থার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট হওয়া বাজার অব্যবস্থাপনা ও দ্রব্যমূলের উর্ধগতি দ্রুত কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Attachments area
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কতটুকু ভালো আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার গুলো

প্রকাশিত : ১০:২৯:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ডলারের চরম সংকট বিশ্বজুড়ে চলা অস্থিতিশীল রাজনৈতিক  সংকট নানাবিদ কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের মূল্য
‘আমি কী রকম বেঁচে আছি/তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/এই কি মানুষ জন্ম?/নাকি শেষ পুরোহিত- জঙ্গলের পাশা খেলা’। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি কী রকম করে বেঁচে আছি’ কবিতায় বেঁচে থাকার যে যন্ত্রণাকাতরতা একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এ যন্ত্রণাদায়ক বেঁচে থাকার কথা শুধু তাঁর কবিতার মাঝেই থমকে আছে তা নয়- বাস্তবেও মানুষ এখন নিজেকে প্রশ্ন করছে, অন্যকে প্রশ্ন ছুঁড়ছে, ‘আমি কী রকম করে বেঁচে আছি, তা কাছ থেকে না দেখলে বোঝাতে পারবো না’।
 প্রাণ কুমার সবুজ সবুজবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ১৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। বেতনের পর সব হিসেব নিকেশ মিলিয়ে মাস শেষের আগেই দেখা যায় পকেট শূন্য। ফলে ধার করতে হয় পরিচিত বা সহকর্মীর কাছে।
তিনি বলেন, ১৮ হাজার টাকা বেতনে হয়তো তিন চার বছর আগে চলতো।  এখন কষ্ট করে ২০-২৫ দিন চলে, কিন্তু তারপর কাছের মানুষদের থেকে ধার নিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো শহরে আর থাকা যাবে না, গ্রামে চলে যেতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচসহ সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের  এমন লাখো মানুষ রয়েছেন আর্থিক চাপে।
সৌরভ দেবনাথ পড়াশোনা করছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুরে ক্লাস শেষে তিনটি টিউশনি পড়াতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। বাকিটা সময়ে প্রস্তুতি নেন সরকারি চাকরির।
ফার্মগেটের একটি মেসে থাকেন ব্যাচেলর সৌরভ সাথে থাকেন আরো দুজন। কিন্তু হঠাৎ করে গত মাসে মেসের ভাড়া আর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে একজন মেস ছেড়ে দিয়েছেন। চাপ বেড়ে গেছে সৌরভের ও। আগে যে টাকায় চলতে পারতেন, এখন আর তাতে খরচ সংকুলান হচ্ছে না। ফলে কাটছাঁট করতে হয়েছে অনেক খরচ। বন্ধ হয়েছে শখের কেনাকাটা, মাঝেমধ্যে ভালো কিছু খাওয়া বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা।
সৌরভ বলেন, যে মেসভাড়া (খাবারসহ) ৪ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, তো হয়ে গেছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাচলরদের খাবার ডিমের দামও এখন দ্বিগুণ। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। আমরা যারা ব্যাচেলর আছি, তারা টিউশনি বা ছোটখাটো চাকরি করে খরচ যোগাই। কিন্তু এভাবে খরচের মাত্রা বাড়তে থাকলে তো বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।
মেস ম্যানেজারদের ভাষ্য, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে খরচ বাড়াতে হয়েছে। যদিও খরচ বাড়ানোর ফলে অনেকের মেসই খালি হয়ে গেছে।
ছোট মুদি দোকান চালান ব্যবসায়ী সাইফুল হক। বাসা নাখালপাড়া। মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার বসবাস। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। এতদিন ব্যবসা দিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল সংসার জীবন। তবে ইদানীং মেলাতে পারছেন না আয়-ব্যয়ের হিসাব। মাস শেষে থেকে যাচ্ছে ঘাটতি।
সাইফুল হক বলেন, বেচাকেনা আগের চাইতে কমে গেছে। মানুষ প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত কেনে না। অনেকে বাকিতেও সওদা কেনে। মালপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে কিনতে পারি না। এছাড়া নিজের খরচ তো আছেই। যে জিনিস কিনতাম ১০ টাকায়, তা কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। মায়ের ওষুধ, বাচ্চাদের পড়াশোনা, বাসাভাড়া সবমিলিয়ে একটা মন্দা সময় পার করছি।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় রিকশা চালান দেলোয়ার হোসেন। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন জমা খরচ বাবদ হাতে থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে এক রুমের ছোট এক বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। মাসে ভাড়া আসে ৩৫০০ টাকা।
ইদানীং বুকে ব্যথা অনুভব করেন আসাদ উল্লাহ। শরীরের শক্তিও আগের মতো নেই। চিকিৎসকও দেখিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন রেস্টে থাকতে। তবে খরচের কথা ভেবে ওষুধও কিনেননি, সংসারের কথা ভেবে রিকশা চালানোও বন্ধ করেননি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রিকশা চালানো কমায়া দিলে চলুম কিভাবে। ঘরে মানুষ আছে, তাদের কথা ভাবতে হয়। তার ওপর আনাজপাতির দাম বাইড়া গেছে। আগে একটু ভালোমন্দ কিন্না খাইতে পারলেও এখন তাও হয় না। এখন মোটা চালের দামই ৫০-৬০ টাকা। আর অন্যান্য কিছুর দাম তো বাদই দিলাম। এভাবে চলতে থাকলে আমরা রিকশাওয়ালারা আর ঢাকায় থাকতে পারুম না।’
মূল্যস্ফীতির হার
সরকারি হিসাবে গত অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত বছরের জুনে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে এখন ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। আর যে দিনমজুর-শ্রমিক বা অন্য পেশার মানুষ গত বছরের জুনে তার শ্রমের বিনিময়ে ১০০ টাকা পেয়েছেন, চলতি বছরের জুনে তারা পেয়েছেন ১০৬ টাকা ৪৭ পয়সা।
এ হিসাবে, দেশের দিনমজুর-শ্রমিকসহ বেসরকারি পেশাজীবীরা যে বাড়তি আয় করছেন, তা দিয়ে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। উল্টো আরও বেশি খরচের বোঝা চাপছে মাথায়। সব মিলিয়ে মানুষের সঞ্চয় বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাসে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম ছিল। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯০। গত এক দশকের মধ্যে সেটাই ছিল ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছরের প্রায় গোড়া থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাবে চলছে গণ্ডগোল।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫।
পরের মাস এপ্রিলে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
জুন মাসে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে, যা ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিপরীতে এই মাসে মজুরি সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী থাকা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবনযাত্রার খরচ। সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতি বোঝে না। তারা জানে এখন আর কোনো কিছু তাদের হাতের নাগালে নেই। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, সরকারি তথ্যই বলছে দেশের মানুষের কষ্টের কথা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সব কিছুর দাম যেভাবে বাড়ানো হলো, তার কোনো অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই। সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আজ এ অবস্থায়। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি আর্থিক চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের ওপরে থাকা চাপ কমে আসবে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে। তেলের দাম কমানো বা সমন্বয় করা হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে সমন্বয় আনার জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। নির্দিষ্টভাবে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে পারে। ফলে স্বল্পবিত্ত মানুষের বোঝার চাপ কিছুটা কমতে পারে। এন আই আহমেদ সৈকত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ সম্পাদক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তিনি মতামত ব্যক্ত করেন বর্তমান সময়ে বহির্বিশ্বের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর বাহিরে নয়। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিত্যদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী মহলের কূট চাল দেশের উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন এবং বহির্বিশ্বের অস্থিতিশীল অবস্থার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট হওয়া বাজার অব্যবস্থাপনা ও দ্রব্যমূলের উর্ধগতি দ্রুত কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Attachments area