অনলাইন রিপোর্ট॥
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা ৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় কিন্তু ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই গোপন কক্ষে ব্যাপক অনিয়ম সহ নানান কারচুপি আর অনিয়মের চিত্র প্রকাশ পায় সিসিটিভিতে তাই নির্বাচন চলাকালীন অবস্থায় মাঝপথেই ভোট বন্ধ করে দেন নির্বাচন কমিশন।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন।অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক করে পরদিন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ইসির যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাসকে কমিটির সদস্য এবং ইসির যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কারিগরি কাজে সহায়তার জন্যে ইসি সচিবালয়ের আইডিইএ-২ প্রকল্পের স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলমকে যুক্ত করা হয়েছে কমিটিতে।
গাইবান্ধা-৫ উপ নির্বাচনে অনিয়ম চিহ্নিত করে সুপারিশ দিতে ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেবে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে ‘সব পদক্ষেপ’ নেওয়ার পরেও কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল, কারা সেজন্য দায়ী– তা চিহ্নিত করবে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ (সোমবার)বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। কার্যপরিধি মেনে কমিটি বন্ধ ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী, রিটার্নিং অফিসার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলব। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নোটিসও জারি করা হয়েছে।”
৬৮৫ জনের শুনানি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “আমরা আজ গাইবান্ধা যাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেওয়া হবে। আশা করি ৭ কার্যদিবসের মধ্য সুপারিশ চূড়ান্ত করা যাবে।”
যা যা পর্যবেক্ষণ করবে তদন্ত কমিটিঃ
পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ছাড়া অন্য ব্যক্তিদের গোপনকক্ষে প্রবেশ, গোপনকক্ষে ভোটদান দেখা, ভোটারদের কোনো প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্য করা বা প্রভাবিত করা, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপনকক্ষের ছবি ধারণ– ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দোষী/দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরা।
দলীয় প্রতীক বা একই রঙয়ের পোশাক পরে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন; পোলিং এজেন্ট বা একইরকম পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের বিক্ষিপ্তভাবে ভোটকক্ষে বিচরণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোপনকক্ষে প্রবেশ, ওই পোশাক উপঢৌকন হিসেবে বা অর্থের বিনিময়ে নেওয়া কিনা ইত্যাদি বিষয় উদ্ঘাটন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনো ব্যক্তি গোপন কক্ষে প্রবেশ করে নিজেই ভোটপ্রদান, ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে দেখা, ভোটদানে বাধা দেওয়া, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটকক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেওয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা অথবা পোলিং এজেন্ট নয়– এমন ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যাক্তিদের শনাক্ত করা।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করা।এসব বিষয়সহ প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো বিষয় থাকলে তা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করা।মঙ্গলবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহাকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষ থেকে), ফুলছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ ১৩৬ জনের বক্তব্য নেবে তদন্ত কমিটি।
বুধবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সাঘাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, গণমাধ্যমকর্মী, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ ৫২২ জনকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুইজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের লিখিত বক্তব্য নেবে তদন্ত কমিটি।নির্ধারিত দিনের নির্ধারিত সময় ও স্থানে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়ে এ সংক্রান্ত নোটিস গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন অফিসারকে পাঠানো হয়েছে।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, গাইবান্ধা পাঁচ আসনের উপনির্বাচনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে সিইসির নয় তা একক ভাবে ইসির সিদ্ধান্ত ছিল। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায় উক্ত উপ নির্বাচনে জাঁকজমক পূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও কারচুপির অজুহাত আনে জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা পরে আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল দলের প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন এবং গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনের পুনঃতফসিল দাবি করে জাতীয় পার্টি।