বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার॥বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানী পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।
২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। এরপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুসজ্জিত র্যালিটি উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার চত্বর হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যানার-ফেস্টুনসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রায় নানা রঙ-বেরঙের টি-শার্ট ও শাড়ি পরে নেচে গেয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ নিজস্ব বিভাগীয় ব্যানারে র্যালিতে অংশগ্রহণ করে।
“অর্জনে গৌরব সতেরো” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসমূহের মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, নাটক পরিবেশনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা উৎসব।
র্যালি শেষে সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে তৃতীয় বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২২ এর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। এতে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি ও অন্যান্য শিল্প কর্ম স্থান পায়।
পরে ১১টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে নাট্যকলা বিভাগের উদ্যোগে ‘তাশের দেশ’ নাটক পরিবেশিত হয়।
এছাড়াও ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় দিনব্যাপী প্রকাশনা প্রদর্শনীর আয়োজিত হয়। এছাড়াও প্রকাশনা প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ, বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ থেকে প্রকাশিত জার্নাল, শিক্ষকদের প্রকাশিত গ্রন্থ ও অন্যান্য মুদ্রণ উপকরণ স্থান পায়।
দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের তত্ত্বাবধানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে মুজিব মঞ্চ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এরমধ্যে নৃত্য, দলীয় সংগীত, নজরুল গীতি, লোক সংগীত উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতাকে সবচেয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ লক্ষ্যে এবার দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ব্যান্ড ও লোক গানের দলের ‘ভবঘুরে’, ‘মনের মানুষ’, ‘ব্লু টাচ’, ‘ট্রাভেলার্স’, ‘মনের মানুষ’, ‘আবোল-তাবোল’, ‘স্বপ্নবাজি’, এবং ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ ব্যান্ডদল দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধারাবাহকিভাবে গান পরিবেশন করে। দিনভর শিক্ষার্থীরা একে অপরকে রঙে রাঙিয়ে রঙিন করে তুলেছিল পুরো ক্যাম্পাস। এ যেনো অন্যরকম একটা আবেশ। দিন গড়িয়ে বিকাল শুরু হওয়ার পর পরই শুরু হয় জমকালো কনসার্ট, সেখানে গানের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘ওয়ারফেজ’ ও ‘সহজিয়া’। তাদের মন মাতানো গানের সাথে শিক্ষার্থীরা নেচে গেয়ে মাতিয়ে তুলছিলো পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকলে উদ্বেলিত ও উৎফুল্ল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সতেরো বছর পূর্তি উদযাপন করে।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কর্তৃক উপাচার্যকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। বাঁধন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি পালিত হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিলো আমাদের এবং সে অনুযায়ী আমরা প্রোগ্রাম সাজিয়েছিলাম। সেগুলো অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা ছিলো আমি মনে করি সেগুলো শতভাগ পূরণ হয়েছে। এছাড়াও আমাদের নতুন ক্যাম্পাস যতদ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় সে ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা ১৮ বছরে পদার্পণ করলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে যে পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি সেটিই হচ্ছে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। ছাত্রী হল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে কিন্তু ছাত্ররা এখনো চ্যালেঞ্জের মুখেই লেখাপড়া করে। সেগুলো আমাদের লাঘব করতে হবে।
উল্লেখ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনসমূহ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।