অনলাইন রিপোর্ট॥
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, সলঙ্গা ও রায়গঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা ভাল নেই। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে এ অঞ্চলের মৃৎ শিল্পী। এ কারণে অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা ধরছেন। তারপরেও এখনো শতাধিক পরিবার পূর্ব পুরুষের পেশা নিয়ে জীবন যুদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।
জেলার সলঙ্গা থানার পালপাড়ায় মৃৎ শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তির উন্নয়নে প্লাস্টিক, মেলামাইল ও সিরামিকের জিনিস পত্রের সহজলভ্যতা এবং এসবের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কদর কমে গেছে মাটির তৈরি পণ্য সামগ্রীর। ফলে মাটির তৈরি মৃৎ শিল্পের সামগ্রী তৈরি ও বিক্রির কাজ করে তাদের পোষাচ্ছে না। কিন্তু তারপর কর্মসংস্থানের অভাব ও বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পেশার সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পরিবার।
রায়গঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামের রনজিত পাল জানান, তার ২ পুত্র আর ১ কন্যা নিয়ে ৫ সদস্যের সংসারে অভাব অনটন এখন নিত্যসঙ্গী। বাপ দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে থাকতে গিয়ে বসতভিটাও আজ বন্ধকী ভিটায় পরিণত হয়েছে। এ শিল্পীকে বাঁচাতে হলে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদান না করলে বিলীন হয়ে যাবে কুমার শিল্পী।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সলঙ্গা থানার পালপাড়া গ্রামে রয়েছে শতাধিক পাল পরিবার। আদি যুগ থেকে পাল বংশের লোকেরা এই পেশায় সম্পৃক্ত থাকায় তাদের পেশা অনুযায়ী গ্রামের নাম হয়েছে পালপাড়া। পালপাড়া গ্রামের রনজিদ পাল, সোহাগি রানী পালসহ অনেকেই জানান, পালের নানা ইতিহাস ও ঐত্যিহ্যের কথা। তারা তাদের সন্তানদের অনেককে এই পেশায় সম্পৃক্ত না করলেও জীবনের বাকি দিনগুলো তারা পূর্ব পুরুষের পেশা নিয়েই থাকতে চান কিন্তু বছরের বড় সময় তাদের হাতে কাজ থাকেনা। গ্রাম হাট বাজারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা জিনিসপত্র নিয়ে অলস সময় বসে থাকতে দেখা যায় কুমারদের।
সলঙ্গা গ্রামের শ্রীমর্তি পাল বলেন, আগের চেয়ে এখন মাটির দাম অনেক বেশি, এবং মাটি আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না অনেক দুর থেকে মাটি আনলে খরচ বেড়ে যায়। তাই আমরা লাভের মুখ দেখিনা। এক সময় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রসার ছিল মৃৎ শিল্পীদের তৈরি ঘট, ধুপাতি, কলস, ডিয়ার, ফুলের টপ, কলস, হাড়ি পাতিল, গামলা। অন্যদিকে মেলা ও ঈদ এলে পাল পাড়ায় ঘুম হারাম হয়ে যেতো। দিন রাত মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকতো পুরো কুমারপাড়া।
রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন বলেন, মৃৎ শিল্পকে আধুনিকরণ করতে এদেরকে বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। তিনি আরো বলেন, ১ লা বৈশাখ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করা প্রয়োজন। মৃৎ শিল্প ধ্বংসের কারণ হলো বাজারে বিভিন্ন ধরণের মেলামাইন প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে এবং মাটির দাম বেশি হওয়ায় মৃৎ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।