ঢাকা ০১:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কে এই বিষ্ময়কর যুবক ঘনিম আল মুফতাহ

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফ্রিম্যান ও ঘনিম আল মুফতাহ।

অনলাইন রিপোর্ট॥
ঘনিম আল মুফতাহ, ২০ বছর বয়সী যুবক। শরীরের নিচের অংশ নেই। মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে আসেন অর্ধেক শরীর নিয়ে। “কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম” রোগে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু সেই সব বাধা পার করে একাধিক মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ঘনিম। তার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন কথা বলেন। তাঁর আইসক্রিমের ব্যবসাও রয়েছে।
রবিবার কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতালেন ঘনিম। তার শ্লোক শোনালেন উপস্থিত দর্শকদের এবং সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের। কাতারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো সেই অনুষ্ঠানে। প্রথমেই দেখা যায় কাতারের শাসক শেখ মুহম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমকে। প্রথমে গানের অনুষ্ঠান হয়। তার পরেই বিশ্বকাপে ঐক্যের বার্তা শোনাতে শোনাতে হাজির হন হলিউডি অভিনেতা মর্গ্যান ফ্রিম্যান। তার সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন অর্ধশরীরের তুমুল জনপ্রিয় ঘনিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘনিম ছিলেন বিশেষ চমক। কারণ অর্ধশরীরের এই যুবক গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তার ভক্ত ও সমর্থকবৃন্দ। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার। তার বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন। ঘনিম যখন মাতৃগর্ভে তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের পরামর্শ দেন।। কিন্তু ঘনিমের মা-বাবা এই পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।
গর্ভধারিণী মা “ইমান-উল-আবদেলি” এবং পিতা “মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ্” এটাকে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিলেন। ২০০২ সালের ৫ মে বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন ঘনিমের মা।ঘনিমের মা তার পিতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি হবো সন্তানের বাম পা, আর তুমি হবে তার ডান পা। আমরা দুজনে সন্তানকে কখনো নিম্নাংশের অভাব টের পেতে দেবো না।
শিশুকাল থেকেই নানান প্রতিকূলতা আর বঞ্চনাকে উপেক্ষা করে এগুতে হয়েছে ঘনিমকে। ‘তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। আল্লাহ তাকে যেমন করে সৃষ্টি করেছেন, তাতেই তিনি কৃতজ্ঞ।’ জীবনঘনিষ্ঠ নির্মম নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখিতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ চারপাশের মানুষদের এসব বলতে বলতেই ঘনিম হয়ে উঠলেন একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। শুধু কি তাই! ঘনিম একজন কবি এবং সাহিত্যিক।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বেড়ে ওঠা অপরাজেয় অবাক শিশু ঘনিম আল মুফতাহ তার জীবনের ২০’তম বছরে এসে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে কাতার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হলেন বিশ্বকাপের আসরে, উদ্বোধনী মঞ্চে। ঘনিম প্রমাণ করে দিলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে কোনো বাধা হতে পারে না। প্রবল ইচ্ছা শক্তিই মানুষকে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কে এই বিষ্ময়কর যুবক ঘনিম আল মুফতাহ

প্রকাশিত : ০২:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
অনলাইন রিপোর্ট॥
ঘনিম আল মুফতাহ, ২০ বছর বয়সী যুবক। শরীরের নিচের অংশ নেই। মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে আসেন অর্ধেক শরীর নিয়ে। “কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম” রোগে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু সেই সব বাধা পার করে একাধিক মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ঘনিম। তার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন কথা বলেন। তাঁর আইসক্রিমের ব্যবসাও রয়েছে।
রবিবার কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতালেন ঘনিম। তার শ্লোক শোনালেন উপস্থিত দর্শকদের এবং সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের। কাতারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো সেই অনুষ্ঠানে। প্রথমেই দেখা যায় কাতারের শাসক শেখ মুহম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমকে। প্রথমে গানের অনুষ্ঠান হয়। তার পরেই বিশ্বকাপে ঐক্যের বার্তা শোনাতে শোনাতে হাজির হন হলিউডি অভিনেতা মর্গ্যান ফ্রিম্যান। তার সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন অর্ধশরীরের তুমুল জনপ্রিয় ঘনিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘনিম ছিলেন বিশেষ চমক। কারণ অর্ধশরীরের এই যুবক গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তার ভক্ত ও সমর্থকবৃন্দ। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার। তার বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন। ঘনিম যখন মাতৃগর্ভে তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের পরামর্শ দেন।। কিন্তু ঘনিমের মা-বাবা এই পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কারণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।
গর্ভধারিণী মা “ইমান-উল-আবদেলি” এবং পিতা “মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ্” এটাকে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিলেন। ২০০২ সালের ৫ মে বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন ঘনিমের মা।ঘনিমের মা তার পিতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি হবো সন্তানের বাম পা, আর তুমি হবে তার ডান পা। আমরা দুজনে সন্তানকে কখনো নিম্নাংশের অভাব টের পেতে দেবো না।
শিশুকাল থেকেই নানান প্রতিকূলতা আর বঞ্চনাকে উপেক্ষা করে এগুতে হয়েছে ঘনিমকে। ‘তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। আল্লাহ তাকে যেমন করে সৃষ্টি করেছেন, তাতেই তিনি কৃতজ্ঞ।’ জীবনঘনিষ্ঠ নির্মম নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখিতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ চারপাশের মানুষদের এসব বলতে বলতেই ঘনিম হয়ে উঠলেন একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। শুধু কি তাই! ঘনিম একজন কবি এবং সাহিত্যিক।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বেড়ে ওঠা অপরাজেয় অবাক শিশু ঘনিম আল মুফতাহ তার জীবনের ২০’তম বছরে এসে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে কাতার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হলেন বিশ্বকাপের আসরে, উদ্বোধনী মঞ্চে। ঘনিম প্রমাণ করে দিলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে কোনো বাধা হতে পারে না। প্রবল ইচ্ছা শক্তিই মানুষকে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।