ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ প্রকল্প

অনলাইন রিপোর্ট॥

ঢাকার জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ আধুনিক স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে। এ অবস্থায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ট্রাঙ্ক নির্মাণ করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএসআইপি)-এর আওতায় দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে এ কাজ করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ঢাকা শহরকে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা ২০১৪ সালে একটি স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান-এর আওতাধীন এলাকায় ২০৩৫ সালের মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা (ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা স্থাপনা ও কালেকশন নেটওয়ার্ক) উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া, ওই মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, পাগলায় দৈনিক ৮০ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে পয়ঃশোধনাগারটিতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে বিদ্যমান স্থানে দৈনিক ৮০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ পয়ঃশোধনাগারটির আধুনিকায়ন একান্ত  প্রয়োজন বলে ঢাকা ওয়াসা মনে করে।

জানা গেছে, দুটি প্যাকেজ কাজের মধ্যে পূর্বাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-২) এর কাজটি যৌথভাবে করবে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (লিড পার্টনার), সাংহাই-এর সেফবন ওয়াটার সার্ভিসেস (হোল্ডিং) ইঙ্ক এবং সাংহাই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ইনস্টিটিউট (গ্রুপ) কোম্পানি লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং বা ওপেন-কাট পদ্ধতিতে মধুবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৬ লাখ টাকা।

অপর প্যাকেজ কাজটি হচ্ছে, পশ্চিমাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-৩)। এ কাজটি যৌথভাবে করবে জিপসাম স্ট্রাকচারাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ইতালির এমিট গ্রুপ ইরকোল মেরিলি ইম্পিয়ান্টি টেকনোলজিস এস.আর.এল এবং ভারতের খিলাড়ি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং বা ওপেন-কাট পদ্ধতিতে নীলক্ষেত থেকে নারিন্দা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকা মহানগরীর মাত্র ২০ শতাংশ জনগণকে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধায় আনা সম্ভব হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্য দিকে বিদ্যমান পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও অতি মাত্রায় পুরনো হয়ে পড়ায় সেগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না।

পাগলা থেকে তেজগাঁও, বিজয় সরণি, আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত বিদ্যমান মেইন ট্রাঙ্কসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় অবস্থিত পয়ঃলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে বর্তমান স্যুয়ারেজ সিস্টেমের কার্যকারিতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষত ১৯৭৮ সালে নির্মিত দৈনিক ১২ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃশোধনাগারটি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে একটি ডিটেইলড প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে শিগগিরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ প্রকল্প

প্রকাশিত : ০২:০৭:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২

অনলাইন রিপোর্ট॥

ঢাকার জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ আধুনিক স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে। এ অবস্থায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ট্রাঙ্ক নির্মাণ করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএসআইপি)-এর আওতায় দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে এ কাজ করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ঢাকা শহরকে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা ২০১৪ সালে একটি স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান-এর আওতাধীন এলাকায় ২০৩৫ সালের মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা (ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা স্থাপনা ও কালেকশন নেটওয়ার্ক) উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া, ওই মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, পাগলায় দৈনিক ৮০ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে পয়ঃশোধনাগারটিতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এতে বিদ্যমান স্থানে দৈনিক ৮০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ পয়ঃশোধনাগারটির আধুনিকায়ন একান্ত  প্রয়োজন বলে ঢাকা ওয়াসা মনে করে।

জানা গেছে, দুটি প্যাকেজ কাজের মধ্যে পূর্বাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-২) এর কাজটি যৌথভাবে করবে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (লিড পার্টনার), সাংহাই-এর সেফবন ওয়াটার সার্ভিসেস (হোল্ডিং) ইঙ্ক এবং সাংহাই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ইনস্টিটিউট (গ্রুপ) কোম্পানি লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং বা ওপেন-কাট পদ্ধতিতে মধুবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৬ লাখ টাকা।

অপর প্যাকেজ কাজটি হচ্ছে, পশ্চিমাংশের ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ড কন্ট্রাক্ট ফর রি-কনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাঙ্ক মেইন (প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-৩)। এ কাজটি যৌথভাবে করবে জিপসাম স্ট্রাকচারাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ইতালির এমিট গ্রুপ ইরকোল মেরিলি ইম্পিয়ান্টি টেকনোলজিস এস.আর.এল এবং ভারতের খিলাড়ি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড। প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো-টানেলিং বা ওপেন-কাট পদ্ধতিতে নীলক্ষেত থেকে নারিন্দা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রাঙ্ক মেইন পুনঃনির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকা মহানগরীর মাত্র ২০ শতাংশ জনগণকে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধায় আনা সম্ভব হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্য দিকে বিদ্যমান পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও অতি মাত্রায় পুরনো হয়ে পড়ায় সেগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না।

পাগলা থেকে তেজগাঁও, বিজয় সরণি, আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত বিদ্যমান মেইন ট্রাঙ্কসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় অবস্থিত পয়ঃলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে বর্তমান স্যুয়ারেজ সিস্টেমের কার্যকারিতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষত ১৯৭৮ সালে নির্মিত দৈনিক ১২ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃশোধনাগারটি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

সূত্র জানায়, এ বিষয়ে একটি ডিটেইলড প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে শিগগিরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।