অনলাইন রিপোর্ট॥
ভয়াবহ বন্যার পর খরায় বছর জুড়ে সিলেট অঞ্চলের ধানচাষিদের কপালে ছিল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তবে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। বিভাগ জুড়ে ধান কাটা নিয়ে কৃষকদের এখন কর্মযজ্ঞ চলছে। শিশিরে ভেজা আমন ধান কাটতে ভোর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। একইসঙ্গে চলছে ধান মাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজও।
বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে বাম্পার ফলনের কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে চাল উৎপাদন।
এ বছর কয়েক বার বন্যার পরও জমিতে স্থানীয়, উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছি। ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমাদের এলাকার সবার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রতি বছরের মত এবার ধান কাটার শ্রমিক সংকট, তাই জমির ধান উঠাতেও দেরি হচ্ছে। তবে মেশিন দিয়েও চলছে ধান কাটা। ভয়াবহ বন্যার পরও ধানের যা ফলন হয়েছে তাতে আমি অনেক খুশি। কিন্তু এবার শুধু বন্যা নয় খরাও ছিল। তাই অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের।
কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “সবকিছুর দাম বেড়েছে; তাই জমি চাষে খরচও বেড়ে গেছে। ফসলের সঠিক মূল্য না পেলে বরাবরের মতো এবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।’’
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সিলেট বিভাগের চার জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে এ বছর রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ তিন হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে চার লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভাগে রোপা আমন ধান কাটা হয়েছে প্রায় ৭৬ ভাগ। আর তিন লাখ ১১ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমি কেটে চাল উৎপাদন করা হয়েছে আট লাখ ২২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সিলেটে এ বছর আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৬ হাজার ১২৭ হেক্টর জমির ধান কেটে দুই লাখ ৪১ হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, “বন্যাপ্রবণ সিলেট অঞ্চলে বন্যার পর এ বছর খরাও ছিল। তারপরও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমন চাষ উপযোগী আবহাওয়া পেয়েছেন কৃষকরা। আর ধান কাটার জন্য প্রচুর মেশিন দেওয়া হয়েছে বিভাগের কৃষকদের। তাই শ্রমিক সংকট থাকার কথা নয়।”
এদিকে সিলেটের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বিভাগের চার জেলায় শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, মাড়াই যন্ত্র ও কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।