ভালোবাসা অক্সিজেনের মতো। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনই বেঁচে থাকলেও ভালোবাসা ছাড়া মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ভালোবাসা খুব দরকার হয়। মানুষের জীবনে একজন দরকার যাকে ভালোবাসতে হয় এবং তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তবে এ ভালোবাসায় থাকতে হয় শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ। সম্মানবোধ ও শ্রদ্ধা না থাকলে মুখে মুখে ভালোবাসা দিয়ে কাউকে সুখ দেয়া যায় না।
আমরা জানি, আমাদের সবার ভালোবাসার ধরন একই রকম না। কেউ অনেক চঞ্চল, তিনি চান সবাইকে জানিয়ে দিতে তাঁর ভালোবাসার কথা, কেউ অনেক চুপচাপ ও নীরবে ভালোবেসে যান। কেউ চান ভালোবাসাটা নিজেদের মাঝেই থাকুক আর কেউ না জানুন। কিন্তু একজন মানুষের সঙ্গে যখন একই ছাদের নিচে থাকা শুরু হয়, তখন কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই ভালোবাসার রূপ বদলাতে শুরু করে। আপনার জন্য ক্যানডি কিনে আনা ছেলেটি এখন আপনার জন্য আর ক্যানডি কিনবে না বা টিফিনের টাকা জমিয়ে যেই মেয়েটি আপনার পছন্দের ঘড়ি কিনে দিয়েছিলো, সেই মেয়েটির ভালোবাসার ধরনও কিন্তু পাল্টে যায়।
তাহলে কি একটা সময় পর আর ভালোবাসা থাকে না? অবশ্যই থাকে, তবে এই ভালোবাসার রূপ পাল্টে যায়। ভালোবাসার এই রূপ পাল্টে যাওয়াটা অনেকের কাছেই ধাঁধার মতো। অনেকেই ভাবতে শুরু করি, সে আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না। সে আর আগের মতো নেই। এসব ক্ষেত্রে আসলে কি ভালোবাসা হারিয়ে যায় নাকি সেটি আরও দৃঢ় হয়? কৈশোর কিংবা তরুণ বয়সের প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্কে আবেগের পরিমাণ বেশি থাকে, তখন সম্পর্কের জন্য উভয়েই সর্বোচ্চ করতে চায়। কিন্তু যখন আমাদের মাঝে পরিপক্বতা আসে তখন আমাদের ভালোবাসার আবেগের সঙ্গে আরও অনেক কিছু যোগ হয়। যেমন: মমতা, দায়িত্ববোধ, শ্রদ্ধা। তখন হয়তো ছেলেবেলার পাগলামিগুলো কেউ করে না কিন্তু এমন অনেক কিছুই করে, যা আসলেই একটা সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যেহেতু আমরা ‘আকাশের চাঁদ এনে দেব’ বা ‘তোমার জন্য জীবন দিয়ে দেব’ ধরনের ভালোবাসায় অভ্যস্ত হয়ে যাই, তাই আমাদের চোখ তখন অনেক ভালো কিছুও এড়িয়ে যায়।
মোহের সময়
এই সময়টা তখনকার, যখন একজন মানুষকে নতুনভাবে চেনা হয়। তাঁর সবকিছুই ভালো লাগবে তখন আপনার। আপনি তখন আপনার সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি থাকবেন শুধু ওই মানুষটার জন্য। কিন্তু এটা খুব কম সময়ের জন্য। কেননা, আপনি তখনো আপনার ভালোবাসার মানুষের ত্রুটি বা খারাপ দিকগুলো জানেন না। জানলেও শুধু ভালো দিকটাই চোখে পড়ে। বলা হয়, এটা যেকোনো সম্পর্কের সবচেয়ে সুন্দর সময়।
দায়িত্ব
এই সময়টা তখন আসে, যখন ভালোবাসার মানুষকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপনি ঠিক করে ফেলেন এই মানুষই সে, যার সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে চান। এই সময় অনেকেই দায়িত্বের চাপ নিতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সময়ে সম্পর্কের ফাটল ধরে। কিংবা আপনি যদি বিবাহিত হন সে ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে সেই সময়, যখন আপনারা ভাবছেন আপনাদের একটি সন্তান হোক কিংবা আপনারা খুব স্থায়ী কিছু করার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এই সময়টা যেহেতু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়িত্বটাকে অনেক বেশি বড় করে দেখা হয়, যেটায় ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মূলত ভালোবাসা থাকে বলেই কিন্তু আপনি বা আপনার সঙ্গী অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে সময়টা পার করতে চান।
দ্বিধা
অনেক দিন ধরে পেতে থাকা অবহেলা বা দায়িত্বের চাপে পড়া মনটা এই সময় অস্থির ও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ভালোবাসার সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষ এই সময় ভাবতে থাকেন, ‘আমি এই মানুষকে ভালোবাসিনি’ বা ‘সে অনেক বদলে গিয়েছে’। আবার যাঁরা সংসারে আছেন, তাঁরা ভাবতে পারেন, ‘শুধু সংসারের জন্য এত কিছু করলাম তাও আমি কী পেলাম’ বা ‘নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমার জন্য কি সে ভাবে?’ এই সময়টায় ভালোবাসা প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু অনেকেই ভুলে যান, এটা সম্পর্কের ব্যাপার—এখানে দুজনেই ছাড় দেবেন। অনেকেই এই সময় বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তবে যাঁরা একটু স্থির থেকে সম্পর্কটা চালিয়ে নিয়ে যান, তাঁরাই বুঝতে পারেন এই সময়ের ভালোবাসা এমনই হবে। কেননা ভালোবাসা না থাকলে কেউ ওসব প্রশ্নের কথা ভাবতেন না।
স্থিরতা এবং সহমর্মিতা
এই সময়টায় কমবেশি সবাই বুঝতে শুরু করেন সেই ক্লাসের পাশের চেয়ারে বসা ছেলেটা জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিংবা যেই মেয়েটির মন খারাপ দেখে সাইকেল চালিয়ে তার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা হতো, তাকে আসলেও এতটা বছর পরও কত ভালোবাসেন। কিন্তু এই অনুভূতি সবার হয় না, কেননা সবাই এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না বা পারেন না। বুঝতে পারেন ভালোবাসাটা সব সময়ই ছিল, কেবল রূপ পাল্টেছে। এর বাইরে আর কিছুই নয়।
কিছু কিছু মানুষ তোমায় ঠিকই বুঝে নিবে। সে বুঝে নিতে পারে বলেই সে তোমার কাছের মানুষ।
.
তোমার হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলো ঠিকই তাদের চোখে ধরা পড়ে যাবে। ফোনের এ প্রান্ত হতে তুমি তাকে বলছো। আমি ভালো আছি। কিন্তু অদ্ভুত কোনো এক মায়াবলে অপর প্রান্ত হতে সে ঠিকই বুঝে নিবে তুমি ভালো নেই।
.
তুমি ভালো নেই বুঝতে পেরে সে ব্যাকুল হয়ে উঠবে। তার দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে সে তোমার দুঃখ কষ্ট দূরীকরণের হাজারো উপায় খুঁজে বেড়াবে। তার নিজেকে নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তা-ভাবনা থাকবেনা। তুমিই তার সব।
.
তোমার দুঃখে তার বুক হাহাকার করে উঠবে। তোমার কষ্টে সে চুপিসারে অশ্রু বিসর্জন দিবে। সে এক অদ্ভুত ব্যাথা অনুভব করবে। যা অন্যান্য ব্যাথার জন্য ওষুধ খেলেও এটাকে সে জিয়িয়ে রাখার চেষ্টা করবে।
.
তোমার সুখেই সে সুখী হবে। তোমার প্রতি থাকবে তার অফুরন্ত ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় থাকবে অতল বিশ্বাস, কিছু মান অভিমান, আর থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে কিছু পবিত্র অনুভূতি।
.
শুধুমাত্র প্রতিদিন দেখা করার নামই ভালোবাসা নয়। সারাটিক্ষণ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারে কমিউনিকেট করার নামই ভালোবাসা নয়। রাত জেগে ফোনালাপে ব্যাস্ত থাকার নামই ভালোবাসা নয়।
.
কিংবা কদিন পর পর ডেটিং এ যাওয়ার নামই ভালোবাসা নয়। অথবা সারাটিক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলার নামই ভালোবাসা নয়। অনেক দূরত্বের মাঝে বহুদিন কথা না বলেও ভালোবাসা যায়।
.
কথা বলতে বলতে তার মায়াবি চাহনীর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অন্য কোনো জগতে হারিয়ে যাওয়ার মাঝেও ভালোবাসা রয়েছে। মন খারাপের রাতে বারান্দায় কিংবা ছাঁদে দাড়িয়ে তার পাঠানো পুরোনো ম্যাসেজ গুলো পড়ে আনমনে হেসে উঠার মাঝেও ভালোবাসা রয়েছে।
.
কিংবা পড়ন্ত বিকেলে শহরের অলিগলিতে হাতে হাত দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে চলা আর ধুকপুক বুক বেয়ে বসন্ত নেমে আসার মাঝেও ভালোবাসা রয়েছে। প্রিয় গানগুলো বারবার শোনার সময় লিরিকসগুলো নতুনভাবে অনুভব করে তাকে কল্পনা করার মাঝেও ভালোবাসা রয়েছে। তাকে নিয়ে ভাবার সময় দু’এক লাইন লিখে ফেলার মাঝেও ভালোবাসা রয়েছে।
.
এই পৃথিবীতে এরকম অসংখ্য ভালোবাসার উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সকল ভালোবাসার মানুষের অন্তরে। যার মাঝে এরকম ভালোবাসার কিছু সুপ্ত অনুভূতি অন্তঃনিহিত। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। ভালো থাকুক ভালোবাসার অনুভূতিগুলো।ç