অনলাইন রিপোর্ট॥
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পরে এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটি আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের ইশতেহারে এই বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে সেই আভাস মিলেছে।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর নতুন এই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
গত সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে সেই বিষয়ে ধারণা দেন। তিনি জানান, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্তম্ভ হবে চারটি। যথা: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই তার সরকারের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এজন্য এই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যেন কিছুতে পিছিয়ে না থাকে এজন্য লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ায় দেশের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। করোনাকালীন সময় বাংলাদশের কার্যক্রম চলমান থাকার পেছনেও ডিজিটাল বাংলাদেশের ভূমিকা আছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই এবার আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করতে কিছু রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। এসব রুপরেখা আগামীতে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধারা হবে।’
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যাত্রা শুরু হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা গড়ার’ দৃঢ় অঙ্গীকার রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেসময় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে বলা হয়, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে।
এরই প্রেক্ষিতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ আজ তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব সাধন করেছে। স্বপ্ন থেকে বাস্তবতায় পরিপূর্ণতা পেয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় সবার জন্য কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাষ্ট্রি প্রোমোশন এ চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে প্রায় ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন। যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। এর ফলে একদিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমেছে। অপরদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হয়েছে।
বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ লাখেরও অধিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টার থেকে নাগরিকেরা প্রায় ৮০ কোটির অধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। ফলে নাগরিকদের ৭৮ দশমিক ১৪ শতাংশ কর্মঘণ্টা, ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ব্যয় এবং ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ যাতায়াত সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ হয়েছে। এখন আরও আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করা হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০৪১ সালের আগে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।’