জবি সংবাদদাতা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সকলকে আমার পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।
বিজয়ের এই দিনে সকল শহীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা। এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট কাল রাতে নির্মমভাবে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের সবার আত্মার প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই।
বিজয় দিবস আসলেই অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম বিজয়ের প্রাক্কালে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আমরা মনে হয়, তেমন বাংলাদেশ চাওয়া উচিত। শহীদ বুদ্ধিজীবী যেমন বাংলাদেশ চেয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমরা সকলে একতাবদ্ধ থাকবো।
প্রশ্ন জাগে সেই বাংলাদেশ কি আমরা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কিন্তু সেই বাংলাদেশকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর আমার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হাত ধরে সেই স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং এখনো দেখছি। সেই স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং আরও হবে। সেটা আমরা বিশ্বাস করি। কারণ ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা যদি সরকার গঠন না করতে পারতেন। আজকের স্মার্ট যে বাংলাদেশের স্বপ্ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে তা স্বপ্নই থেকে যেতো।
আমি আশা করব, এই প্রজন্মের সবাই যেন ইতিহাস সচেতন হয়। কারণ বিভিন্নভাবে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। রাজাকার, আলবদর, আলসামস, তারা এই তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। দেখেছি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পর জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি কায়দায় দেশকে শাসন করার চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতা বিরোধী যে অপশক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যায় সাজা প্রাপ্ত আসামীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের শাসন করার জন্য। যেটা আমাদের সকলের জন্য অপমানজনক ছিল। আমরা সেই সময় যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, আমাদের জন্য লজ্জার এবং দুঃখজনক ছিল।
একসময় একজন শাসক বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু এটা শুধু স্লোগানেউ সীমাবদ্ধ ছিল। কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু মুখেই ছিল।
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদা তারা বসবাস করছে। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানের।
আরেকটি বিষয় হলো ইতিহাসকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ছিল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। সেটা কে কেরে নেওয়া হয়েছিল, বাদ দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা কি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে হয়েছিলো। কখনোই না। স্লোগান ছিলো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান ছিলো। সেটা কেও বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল দুঃখজনকভাবে। ইতিহাস কাউকে কখনো ক্ষমা করে না। ইতিহাস অনেক নির্মম। এটাই কিন্তু প্রমাণ হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে যেই চেতনা, আদর্শ ছিলো এখন তা অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারণেই সম্ভব হয়েছে। মানুষ এখন মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস জানছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এই সরকারের আমলেই আমরা পেয়েছি. যার ফলে বঙ্গবন্ধুকে চেনার, জানার সুযোগ হয়েছে কোটি কোটি মানুষের, বাঙালির। প্রধানমন্ত্রী হাল না ধরলে এটি সম্ভব হতো না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী সঙ্গে জড়িত থাকার ঐতিহ্য রয়েছে। সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা দায়বদ্ধতা ছিল। প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য বিশাল জায়গা দিয়েছেন। আমরা এখন চেষ্টা করব তার বাস্তব রূপ দিতে। এই বাস্তব রূপ লাভ করতে, আমাদের সকলের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে কারো ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করা ঠিক হবে না। দীর্ঘসূত্রিতার জন্য যারা কাজ করবেন, তারা ব্যর্থ হবেন। বিভিন্ন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গতিশীলতা এনেছেন। আশা করি আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পও গতিশীলতা পাবে। সকল বাধা, অপশক্তি দূর হবে।
মুক্তিযোদ্ধা চেতনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যেন আমরা ধরে রাখতে পারি সে চেষ্টা করব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন ত্যাগ করেছেন বিজয়ের দিনে তাদের শ্রদ্ধা জানাই।
সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও এই বিজয়ের দিনে আশা করব, উপাচার্য ও শিক্ষকদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কে সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে নতুন অনুপ্রেরণায় যা কিছু প্রয়োজন আমরা করব।