অনলাইন রিপোর্ট॥
জৈব জীবনের ওপর প্রতিকূল মহাকাশের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জানতে পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে নাসা। তবে কোনো প্রাণী কোষের বদলে ‘বায়োসেন্টিনেল’ স্যাটেলাইট বহন করছে ‘ইস্ট’। আকারে একটি জুতার বাক্সের সমান বায়োসেন্টিনেল স্যাটেলাইট। এত ছোট আকারের স্যাটলাইটগুলো ‘কিউবস্যাট’ নামেই বেশি পরিচিত। আর কিউবস্যাটটি যে ‘ইস্ট’ বহন করছে, তাও বিশেষ কোনো জৈব জীবন নয়; রুটি আর বিয়ার উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত ‘ইস্ট’ দিয়েই দূরের মহাকাশে এই পরীক্ষা শুরু করেছে নাসা।
নাসা বায়োসেন্টিনেল কিউবস্যাটকে মহাকাশে পাঠিয়েছে সদ্য সমাপ্ত আর্টেমিস ওয়ান মিশনের অংশ হিসেবে। মহাজাগতিক বিকিরণ ইস্ট কোষগুলোর ওপর কী প্রভাব ফেলে জানতে চায় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
নাসা জানিয়েছে, ক্যারিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত ‘এমিস রিসার্চ সেন্টার’ থেকে ৫ ডিসেম্বর যখন প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করার সংকেত পাঠানো হয়, পৃথিবী থেকে তখন ছয় লাখ ৫৫ হাজার ৭৩০ মাইল দূরে ছিল বায়োসেন্টিনেল। আর্টেমিস প্রকল্পের অংশ হিসেবে মঙ্গলসহ দূরের মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসা। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আাগে মানব নভোচারীদের দেহের ওপর দীর্ঘ মহাকাশযাত্রা এবং মহাজাগতিক বিকিরণে প্রভাব ও সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
জৈব কাঠামোর বিচারে মানব দেহের কোষের সঙ্গে ইস্ট কোষের অনেক মিল থাকায় বায়োসেন্টিনেলে ইস্ট পাঠানোর কৌশল বেছে নিয়েছে নাসা। কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং মেরামতের বেলায় অনেকটা একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানব দেহের কোষ আর ইস্ট কোষ।
নাসা বলছে, “বায়েসেন্টিনেলের বৈজ্ঞানিক ফলাফল গহীন মহাকাশে মানব দেহের ওপর মহাজাগতিক বিকিরণের প্রভাব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের ঘাটতি মেটাবে।” পৃথিবীর চৌম্বকীয় নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে সূর্যকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে বায়োসেন্টিনেল। আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাস এ অবস্থা থেকেই বেশ কিছু পরীক্ষা চালাবে কিউবস্যাটটি।
আগ্রহীদের ‘আইস অন দ্য সোলার সিস্টেম’ সিমুলেশনের মাধ্যমে কিউবস্যাটটির যাত্রাপথের দর্শক হওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছে নাসা। এটি আদতে সৌরজগতের একটি ডিজিটাল মডেল; তবে গ্রহ-নক্ষত্রসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মহাকাশযানগুলোর তথ্যে তাৎক্ষণিক আপডেট হতে থাকে মডেলটি। এর মাধ্যমে যে কোনো সময়ে সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ থেকে শুরু করে বায়োসেন্টিনেল পর্যন্ত সবকিছুর সঠিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন মহাকাশ ভক্তরা।