ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন দিশা ‘বেস এডিটিং’

অনলাইন রিপোর্ট॥

ব্রিটেনের লেস্টার শহরের বাসিন্দা ১৩ বছর বয়সী আলিসা। গত বছরের মে মাসে ক্যানসার শনাক্ত হয় তার। দেড় বছর ধরে কেমোথেরাপি, বোনম্যারো প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়। কোনো উন্নতি হয় না। আলিসার পরিবার সব আশা ছেড়ে দেয়। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে আলিসার ক্যানসার সারাতে এক নতুন পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন এক দল চিকিৎসক। নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম ‘বেস এডিটিং’। এই পদ্ধতির প্রয়োগেই শেষ পর্যন্ত যুগান্তকারী সাফল্য মেলে। কিশোরী আলিসা এখন ক্যানসারমুক্ত।

গত বছরে আলিসার টি-সেল অ্যাকিউট লিমফোব্ল্যাস্টিক লিউকোমিয়া ধরা পড়ে। এরপর ক্রমশ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সব রকম চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের পরেও যখন আশান্বিত হওয়ার মতো ফল পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ব্রিটেনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আলিসার শরীরে নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ছয় মাস আগে এই পদ্ধতি আলিসার উপর প্রয়োগ করা হয়। এখন আলিসার শরীরে ক্যানসার নেই! তবে আবারও তা ফিরে আসে কিনা, সেটা দেখার জন্যই তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও ক্যানসার চিকিৎসায় এটা অকল্পনীয় ছিল। তবে জেনেটিকস বা বংশগতিবিদ্যার অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন এই ধরনের চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠেছে। আলিসার ক্যানসার সারাতে প্রয়োগ করা ‘বেস এডিটিং’ চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে মাত্র ছয় বছর আগে। বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ডিএনএর ‘বেস’কে বলা হয় জীবনের ভাষা। ডিএনএ-তে চার রকম বেস আছে- অ্যাডেনিন (এ), সাইটোসিন (সি), গুয়ানিন (জি), থাইমিন (টি)। এই চার বেসকে মানবদেহের জেনেটিক কোডের ভিত্তি বলা হয়।

আলিসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুস্থ ‘টি’ (থাইমিন) সেল নেওয়া হয়েছিল। সেই ‘টি’-সেলকে বেস এডিটিংয়ের মাধ্যমে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে তা আলিসার ক্যানসার সৃষ্টিকারী ‘টি’ সেলকে চিনতে পারে এবং সেটাকে ধ্বংস করতে পারে। বিজ্ঞানীরা সেই দাতা ‘টি’ সেলের ডিএনএ-তে বেস এডিটিং করে এটাও নিশ্চিত করেছেন, যেন দাতা ‘টি’ সেল নিজেরা নিজেদের ধ্বংস না করতে পারে। এছাড়া কেমোথেরাপির ওষুধও যাতে দাতা ‘টি’ সেলকে ধ্বংস করতে না পারে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মারফত সেটাও নিশ্চিত করা হয় এবং এই পদ্ধতি আলিসার দেহের ক্যানসার তৈরিকারী ‘টি’ সেলকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত আলিসাই নিয়েছিল। অতঃপর আলিসা ও তার পরিবারের সম্মতি নিশ্চিত করে চিকিৎসকেরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা করে ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা বিশ্বের প্রথম রোগী আলিসা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন দিশা ‘বেস এডিটিং’

প্রকাশিত : ০৩:৩৬:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

অনলাইন রিপোর্ট॥

ব্রিটেনের লেস্টার শহরের বাসিন্দা ১৩ বছর বয়সী আলিসা। গত বছরের মে মাসে ক্যানসার শনাক্ত হয় তার। দেড় বছর ধরে কেমোথেরাপি, বোনম্যারো প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়। কোনো উন্নতি হয় না। আলিসার পরিবার সব আশা ছেড়ে দেয়। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে আলিসার ক্যানসার সারাতে এক নতুন পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন এক দল চিকিৎসক। নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম ‘বেস এডিটিং’। এই পদ্ধতির প্রয়োগেই শেষ পর্যন্ত যুগান্তকারী সাফল্য মেলে। কিশোরী আলিসা এখন ক্যানসারমুক্ত।

গত বছরে আলিসার টি-সেল অ্যাকিউট লিমফোব্ল্যাস্টিক লিউকোমিয়া ধরা পড়ে। এরপর ক্রমশ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সব রকম চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের পরেও যখন আশান্বিত হওয়ার মতো ফল পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ব্রিটেনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আলিসার শরীরে নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ছয় মাস আগে এই পদ্ধতি আলিসার উপর প্রয়োগ করা হয়। এখন আলিসার শরীরে ক্যানসার নেই! তবে আবারও তা ফিরে আসে কিনা, সেটা দেখার জন্যই তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও ক্যানসার চিকিৎসায় এটা অকল্পনীয় ছিল। তবে জেনেটিকস বা বংশগতিবিদ্যার অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন এই ধরনের চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠেছে। আলিসার ক্যানসার সারাতে প্রয়োগ করা ‘বেস এডিটিং’ চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে মাত্র ছয় বছর আগে। বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ডিএনএর ‘বেস’কে বলা হয় জীবনের ভাষা। ডিএনএ-তে চার রকম বেস আছে- অ্যাডেনিন (এ), সাইটোসিন (সি), গুয়ানিন (জি), থাইমিন (টি)। এই চার বেসকে মানবদেহের জেনেটিক কোডের ভিত্তি বলা হয়।

আলিসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুস্থ ‘টি’ (থাইমিন) সেল নেওয়া হয়েছিল। সেই ‘টি’-সেলকে বেস এডিটিংয়ের মাধ্যমে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে তা আলিসার ক্যানসার সৃষ্টিকারী ‘টি’ সেলকে চিনতে পারে এবং সেটাকে ধ্বংস করতে পারে। বিজ্ঞানীরা সেই দাতা ‘টি’ সেলের ডিএনএ-তে বেস এডিটিং করে এটাও নিশ্চিত করেছেন, যেন দাতা ‘টি’ সেল নিজেরা নিজেদের ধ্বংস না করতে পারে। এছাড়া কেমোথেরাপির ওষুধও যাতে দাতা ‘টি’ সেলকে ধ্বংস করতে না পারে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মারফত সেটাও নিশ্চিত করা হয় এবং এই পদ্ধতি আলিসার দেহের ক্যানসার তৈরিকারী ‘টি’ সেলকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত আলিসাই নিয়েছিল। অতঃপর আলিসা ও তার পরিবারের সম্মতি নিশ্চিত করে চিকিৎসকেরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা করে ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা বিশ্বের প্রথম রোগী আলিসা।