দেশের মাদরাসাগুলোতে গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে মাদরাসা শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, মাদরাসার ছাত্র কত হলো, কতো আয় হলো এটি দিয়ে সাফল্য নির্ধারণ হয় না। কতজন সঠিক লোক তৈরি হলো, কতজন নাহিদ ও আসিফ তৈরি করতে পেরেছেন সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। মাদরাসা থেকে নাহিদ-আসিফের মতো সূর্যসন্তান তৈরি করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকসহ নানাবিধ অপরাধে সমাজ যে ছেয়ে গেছে, সেখান থেকে অপরাধমুক্ত সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা ও মানুষ তৈরি করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতা কামনা এবং নৈরাজ্য ও অপতৎপরতা রোধে শিক্ষক-কর্মচারীদের করণীয় শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন।
সভায় জমিয়াত সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমরা একটা দুঃশাসন থেকে মুক্ত হয়ে সুশাসনের দিকে যাত্রা শুরু করেছি মাত্র। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র চলছে। এই সরকারের সামনে ১৬ বছরের জঞ্জাল সরানোর চ্যালেঞ্জ। ড. ইউনূস সাহেব বলেছেন, গোটা সমাজটা পচে গেছে, সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
সবাইকে সামনের দিকে তাকানোর আহ্বান জানিয়ে বাহাউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা দুনিয়াতে উদাহরণ হয়ে গেছে। দুঃখজনক হলো, আমাদের আলেমদের এখানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অনেক কম।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, আমাদের কিছু লোকজন শুধু বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চাকরির নিশ্চয়তা; এগুলোর পেছনে ছুটোছুটি করছেন। জমিয়াতুল মোদাররেছীন দেশের আলেম-ওলামারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেতন-ভাতার বার্গেনিং এজেন্ট হওয়ার জন্য না। এটা পীর-মাশায়েখদের সংগঠন, এদেশে যাতে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ হয়, দেশটা যাতে সঠিকভাবে ইসলামী নীতি অনুসরণ করে চলে; এটার জন্য তারা কাজ করেছিলেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ড. ইউনূস সাহেবও ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়াশুনা করেছেন। উনার নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ, সেনাবাহিনীতে যারা আছেন সবাই ইসলামপ্রিয়। লেবাসে আমরা যাতে বিভ্রান্ত না হই। এর আগে অনেকে বড় বড় লেবাসধারী ছিল, রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশুনা করেছেন বলে নওফেল গর্ব করে বলেছেন। তার পেছনে গিয়ে মাদরাসা বোর্ড, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য ফতোয়া দিয়েছেন অনেকে যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, পূজার প্রসাদ খাওয়া জায়েজ ইত্যাদি। উৎসব সবার হতে যাবে কেন? যার যার ধর্মীয় উৎসব তারা তাদেরটা পালন করবেন। এ ধরণের ফতোয়া যারা দিয়েছেন, তাদের পেছনে কোনো ঈমানদার থাকতে পারে না।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এই সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) আমাদের সারাদেশে শর্তহীন সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে। কারণ, এই সরকারের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। তাদের রাষ্ট্র গঠনে এক বছরও লাগতে পারে, এর বেশিও লাগতে পারে। রাষ্ট্রটার অর্থনৈতিক, শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে ভয়াবহ অবস্থা। এটা পরিচ্ছন্ন করতে সময় লাগবে।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া, উচ্চাকাঙ্খা নেই। আমরা চাই, সমাজ সুন্দর হোক, সমাজে যেন সম্মান নিয়ে চলতে পারি। ১৯৭১ সালে কোন দল কি করেছে, সেটি নিয়ে এতোদিন দাঁড়ি-টুপি দেখলেই অসম্মানিত করা, সেকেন্ডারি নাগরিকের মতো চলা; সেটি আর থাকবে না। আমরা এখন সবাই প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে চলবো।
জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর পরিচালনায় এতে দোয়া পরিচালনা করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান। বক্তব্য দেন ছারছীনা দারুসছুন্নাহ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল আমীন আফসারী, ঝালকাঠী নেছারাবাদ দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা মো. খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, মৌকারা কামিল মাদরাসার প্রভাষক পীরজাদা শাহ নেছার উদ্দিন ওয়ালিহী, মদীনাতুল উলুম ইসলামি মিশন বালক কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, জৌনপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব ও আদর্শ ইসলামি মিশন কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, শাহ জালাল ইয়াকুবিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. কমরউদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ,খ,ম,আবুবক্কর সিদ্দিক, বিশ্বনাথ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নোমান আহমেদ, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক (নাঈম), ময়মনসিংহ ডিএস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা ইদ্রিস খান, ফুলবন ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাও. আব্দুর রাজ্জাক, আহছানুল উলুম গাউছিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ কাযী মাওলানা আবুল বয়ান হাশেমী, কাগতিয়া এশাতুল উলুম এমএ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মো. মনিরুল্লাহ আহমদী, কাপাসিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. জহিরুল হক, যশোর আমিনিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল ইসলাম, খুলনা নেছারীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান, সাহেব আলী ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. আবু জাফর মো. সাদেক হাসান, নয়াটোলা এইউ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. রেজাউল হক ও বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মাও. মো. আবুবকর সিদ্দিক।
এর আগে ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনকে সভাপতি ও গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর ভাংনাহাটি রহমানীয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীকে মহাসচিব করে ২০৭ সদস্যের জমিয়াতুল মোদাররেছীনের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।