‘আমি বিসিবির কাছে নিজের শেষ টেস্টটি মিরপুরে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। যদি তা না হয়, তাহলে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ টেস্ট হবে।’– সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন গল্পে, মাঠে আর মাঠের বাইরে নাটকীয়তা ছিল সঙ্গী। বিদায় বেলায় সেই নাটকীয়তার কিছুটা ছাপ থাকা হয়ত অস্বাভাবিক না কোনোভাবেই। সাকিব অবসরের দিন জানিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরের টেস্ট থেকে নেবেন বিদায়।
বৃহস্পতিবার কানপুর টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে সাকিব জানালেন নিজের সিদ্ধান্তের কথা। তবে সেই সিদ্ধান্তেও যে যদি-কিন্তু লেগে আছে। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। সেই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে ৫ই আগস্ট। সাকিব আল হাসানও হয়েছেন নিন্দিত। মামলার খড়গও ঝুলছে মাথার ওপরে।
সাকিবের অবসরের ভাবনায় মিশে আছে সেসব কথাও। মিরপুরে নিজের চেনা মাঠে খেলতে চান ঠিকই। তবে সেজন্য যে নিরাপত্তার কথাটাও ভাবতে হচ্ছে। অনুকূলে না থাকলে সাকিব নিজের শেষটা করতে চান কানপুরের গ্রিনপার্কে।
সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের ঘোষণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে শোনা গেল নিরাপত্তার ইস্যুটাও, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোন সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
সাকিবের দরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। সেই শর্ত না মিললে হয়ত কানপুরেই শেষবার সাদা পোশাকে দেখা যাবে সাকিব আল হাসানকে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং এই ফরম্যাটের শেষটা আমি ঘরের মাঠেই খেলতে চাই। আমি বিসিবির কাছে নিজের শেষ টেস্টটি মিরপুরে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। যদি তা না হয়, তাহলে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ টেস্ট হবে।’
কানপুরে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশের এই তারকা এই অলরাউন্ডার জানালেন, টি-টোয়েন্টিতে নিজের শেষ ম্যাচটা এরইমাঝে খেলে ফেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের বিদায়টা তিনি নেবেন ঘরের মাটি থেকেই। অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে শেষবার বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকে দেখা যাবে সাকিব আল হাসানকে।
সাকিবের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালে ভারত সিরিজে চট্টগ্রাম টেস্টে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ ড্র করেছিল। সাকিব কেবল ১ ইনিংসেই ব্যাট এবং বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন সেবারে। ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৭ রান। বল হাতে ছিলেন উইকেটশূন্য। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের বাইরে নিজের শেষ টেস্টটাও সেই ভারতের বিপক্ষেই খেলবেন সাকিব।
সাদা পোশাকে সাকিব এখন পর্যন্ত ৭০ টেস্ট খেলেছেন। ব্যাট হাতে ৩৮.৩৩ গড়ে করেছেন ৪৬০০ রান। সেঞ্চুরি আছে ৫টি, অর্ধশতক ৩১টি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সাকিবের। বল হাতে নিয়েছেন ২৪২ উইকেট। তিনিই অন্য দুই সংস্করণের মতন টেস্টেও দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।