Logo
EN
সর্বাধিক পঠিত | সর্বশেষ | ইপেপার |
বিশ্ব রাশিয়ার রপ্তানির ৩৯ শতাংশ এখন রুবলে
রাশিয়ার রপ্তানির ৩৯ শতাংশ এখন রুবলে
রাশিয়ার আন্তর্জা
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। একের পর এক পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পাহাড়ে চাপা পড়ে রাশিয়ার অর্থনীতি। সেই বাস্তবতায় বিকল্প পদ্ধতিতে বাণিজ্য বিস্তারে নতুন পদক্ষেপ নেয় রাশিয়া।
ইউরোপের দেশগুলোকে রুবলের মাধ্যমে গ্যাস কিনতে বাধ্য করা হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে অপরিশোধিত তেলও বিক্রি করেছে রুবলে। এখন রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুবলের ব্যবহার বেড়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, রপ্তানি-বাণিজ্যে রুবলের ব্যবহার ২০২১-২৩ সময়ে তিন গুণ হয়েছে। দেশটির রপ্তানি- বাণিজ্যের ৩৯ শতাংশই এখন রুবলে হচ্ছে। সম্প্রতি রাশিয়ান স্টেট কাউন্সিলের এক সভায় পুতিন জানান, দেশটির রপ্তানি- বাণিজ্যে ‘বিষাক্ত পশ্চিমা মুদ্রার’ ব্যবহার গত বছর কমে অর্ধেকে নেমে গেছে।
তবে সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খুব একটা মসৃণ হচ্ছে না। এমনকি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছে দেশটির রুশ কোম্পানিগুলো। ক্রেতা খুঁজে বের করা, ব্যবসায়িক আলোচনা ও বিপণনের তথ্য প্রাপ্তি- এসব ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখে পড়ছে রাশিয়া। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। এসব সমস্যা সমাধানে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার অনেক সম্পদ জব্দ করে। সেই সঙ্গে সুইফট ব্যবস্থায় রাশিয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন লেনদেনের সমস্যা সমাধানে রুবলের ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহারে জোর দিচ্ছে রুশ ও মিত্র দেশগুলো। রপ্তানির মূল্য পরিশোধ এখনো বড় সমস্যা। পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানির লেনদেন বাধাগ্রস্ত করছে। মূলত লেনদেনের সমস্যা সমাধানে রুবলের ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহারে জোর দিচ্ছে রুশ ও মিত্র দেশগুলো; কিন্তু পশ্চিমারা সেখানেও নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাগড়া দিচ্ছে। তবে রাশিয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বের অন্যান্য দেশও বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহারে জোর দিয়েছে। সারা বিশ্বেই এখন বাণিজ্যে ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সুইফটের বাইরে বা পশ্চিমা আধিপত্যের বিপরীতে নতুন অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা চলছে। ব্যাপকভাবে জাতীয় মুদ্রা ব্যবহারের জন্য বিদেশি নেতাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। পেমেন্ট সিস্টেম, প্ল্যাটফর্ম ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ‘বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আসছে এবং নতুন ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের আধিপত্য থাকবে না। ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তাদের মিত্রদের দেওয়া জঘণ্য নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে পঙ্গু করতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা বুমেরাংয়ের মতো পশ্চিমাদের দিকে ফিরে আসছে। বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলারের ভূমিকা ইতোমধ্যে আঘাত পেয়েছে এবং রুবলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানিমূল্য নির্ধারণের পদক্ষেপ হবে আমাদের স্বার্থে এবং অংশীদারদের স্বার্থে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভূ-অর্থনীতিতে আরেকটি পরিবর্তন এসেছে। সেটি হলো- রাশিয়া ও চীনের কাছাকাছি আসা। চীন এখন রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত দুই বছরে অনেকটাই বেড়েছে। তারা নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করছে। ফলে ডিডলারাইজেশন গতি পেয়েছে। ২০১৫ সালে রাশিয়া-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের, ২০২০ সালে ছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, ২০২২ সালে তা ১৯ হাজার কোটি ডলারের উন্নীত হয়। ২০২৩ সালে তা ২৪ হাজার কোটি ডলারে উঠছে। অর্থাৎ ২০১৫ সালের পর তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় চার গুণ হয়েছে।
পুতিন বলেন, ‘আমি আরেকটি বিষয়ে জোর দিতে চাই। সেটি হলো- বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা ও ডিজিটাল আর্থিক সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এ ধরনের ব্যবস্থা তৃতীয় দেশের হস্তক্ষেপ ব্যতীত আরও সহজ ও স্বাধীনভাবে কাজ করবে। বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা ও ডিজিটাল আর্থিক সম্পদ ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ের ওপর জোর দিতে চাই। এ ধরনের একটি ব্যবস্থা তৃতীয় একটি দেশ থেকেও সহজ ও স্বাধীনভাবে কাজ করবে।’