শীতের আমেজে পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে প্রকৃতির রূপে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো পর্যটকের সমাগম হয়েছে পাহাড়, ঝর্ণা আর প্রাকৃতিক রূপে ঘেরা পাহাড়কন্যা বান্দরবানে। জেলার অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্পট মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈল প্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, ডিম পাহারসহ আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত।
জেলার আবাসিক হোটেলগুলোর রিসিপশনে রুম বুকিং দিতে অপেক্ষা করতে দেখা যায় পর্যটকদের। বড়দিন উপলক্ষ্যে আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাজানো হয়েছে হোটেলগুলো। বড় দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে জেলার হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
সুদূর নওগাঁ থেকে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ ৫৫ জনের একটি দল নিয়ে ওবায়দুল আলম এই ছুটিতে এসেছেন বান্দরবানে। নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলাসহ ঘুরছেন বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাপন ও তাদের ঐতিহ্য তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। ঘুরতে এসে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেন আগত এই পর্যটক।
সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষ্যে বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটক জুবায়ের জানান, বান্দরবানে এর আগেও এসেছেন তিনি। তবে এ বার জেলায় ঘুরতে এসে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই ভালো লাগছে।
ঘুরতে আসা এক দম্পতি জানান, স্বামী, ভাই-বোনসহ পরিবার নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে এসে খুবই আনন্দ উপভোগ করছেন তারা। আসার সময় রাস্তার দুই পাশের সৌন্দর্যসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রশংসা করেন তারা।
এদিকে দীর্ঘদিন পর জেলায় আশানুরূপ পর্যটকের সমাগম হওয়ায় হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো এখন কানায় কানায় পূর্ণ। সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে হোটেল ডি-মোরের অপারেশন ম্যানেজার ডমেপ্রু মারমা জানান, দীর্ঘদিন পর আমরা অনেক বেশি বুকিং পাচ্ছি। আগের তুলনায় আমরা অনেক আশাবাদী। সাপ্তাহিক ছুটি, বড়দিনসহ সামনে ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষ্যে বান্দরবানে পর্যটকের আগমন বাড়বে।
হোটেল মোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন জানান, সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষ্যে বান্দরবানের হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। ইংরেজি নতুন বছরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
তিনি জানান, পর্যটন খাতে বিগত চার বছরে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা থেকে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলেও জেলায় পর্যটক ভ্রমণের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পর্যটন শিল্পের নির্ভরশীল ৮০ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকার অস্তিত্ব টিকে থাকবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান জোনের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। আগত পর্যটকদের ভ্রমণে নিরাপত্তা দিতে আমরা সদা প্রস্তুত।